প্রকাশিত: ১৩/০৫/২০১৭ ৭:৫৯ এএম
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

তারা সবাই যুবক। কখনও একা আসেন, কখনও কয়েকজন মিলে দল বেঁধে আসেন। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ঘরভাড়া নিতে চান। পরিচয় দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, এলাকার পাহাড় ও বন নিয়ে গবেষণা করতে এসেছেন। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও, রামু উপজেলার ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়াসহ আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় কয়েকদিন ধরে এভাবে অপরিচিতদের আনাগোনা এবং বাসাভাড়া নিতে অতি আগ্রহ প্রকাশ করায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঈদগড় ইউনিয়নে বিশেষ মতবিনিময় সভা করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি।

রামু উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ঈদগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম ভুট্টো জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ ধরে এলাকায় অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় লোকজনের বাড়িতে গিয়ে বাসাভাড়া নিতে চান। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় তিনি বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ঈদগাঁও, ঈদগড়সহ আশপাশের এলাকায় অপরিচিত লোকজনের উপস্থিতির কথা জানিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে প্রশাসন। তিনি জানান, এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এলাকার লোকজনকে সচেতন করার জন্য ঈদগড়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে।

ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাজাহান আলী। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোসেন। সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুর রহমান টুটুল, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল্লাহ, বিজিবি-৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভির, র‌্যাব কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন প্রমুখ।

সভায় ঈদগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী বলেন, ‘বাইশারী ইউনিয়নের ছাগলখাইয়া এলাকায় কিছু অপরিচিত লোক আস্তানা গেড়েছে বলে এলাকার লোকজনের মাধ্যমে শুনেছি।’ দুর্গম পাহাড়ি ওই এলাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্রুত অভিযান চালানোর দাবি জানান তিনি।

মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, এলাকার লোকজন সচেতন থাকলে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা কোনো রকম নাশকতার সুযোগ পাবে না। তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ঈদগড় এবং আশপাশের এলাকা পাহাড়ি বনভূমি হওয়ায় এখানে সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে অপরাধীদের ধরা সহজ হবে।

রামু উপজেলার ঈদগড় এবং আশপাশের এলাকাকে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এলাকার পাহাড়ে সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের গোপন আস্তানা রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজনকে অপহরণ করে এ এলাকায় পাহাড়ি আস্তানায় রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। পাহাড়ে রয়েছে অস্ত্র তৈরির বেশ কিছু কারখানা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এর আগে অস্ত্র কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। অভিযানে গিয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার কিছু লোকজন নব্য জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সীতাকুণ্ড ও সিলেটে নিহত কয়েক জঙ্গির বাড়ি এ এলাকায় বলে পুলিশ স্বীকার করেছে। এলাকার লোকজন বলেন, বিভিন্ন স্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান চালানোয় জঙ্গিরা এ এলাকায় আত্মগোপনে করতে পারে। – সুত্র সমকাল

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারের সাবেক বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সাবেক সহকারি মোটরযান পরিদর্শক (বর্তমানে বান্দরবানে কর্মরত) ...